Our School History
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সূক্রাপুর থানাধীন কে. এল. জুবিলী স্কুল ও কলেজ শতাব্দী উত্তীর্ণ দীর্ঘ প্রায় ১৫০ বছরের দেশের এক অন্যতম প্রাচীন, বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ । বলতে গেলে, এ প্রতিষ্ঠানটি একটি ইতিহাস, একটি সূতিকাগার, সর্বোপরি– একখন্ড উর্বরা ভূমি । বহু চড়াই–উৎরাই পেরিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিবাচক ধারা প্রতিষ্ঠা ও সকল গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলন–সংগ্রামের পক্ষে ফলপ্রসূ ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে আজও কালের সাক্ষী হয়ে আছে । তাই বাস্তবতার আলোকেই, বিগত ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে এ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে এক উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় ছোটলাট কারমাইকেল মন্তব্য করেছিলেন, “আমার পরিদর্শনকৃত বিদ্যালয়গুলোর মাঝে জুবিলী বিদ্যালয় বৃহত্তম“ ।
উনবিংশ শতাব্দীর ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাক্ষ আন্দোলনের জোয়ার যখন ঢাকা শহরকে আন্দোলিত করে, ঠিক থখনি বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ববর্গ সর্বশ্রী অনাথ বন্ধু মল্লিক, ব্রজসুন্দর মিত্র ও দীননাথ সেন প্রমুখ–এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টয় প্রতিষ্ঠিত হয় “ঢাকা ব্রাক্ষ স্কুল“ । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পুর্তুগিজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করার পর পর্তুগিজদেরই স্থাপিত ভবন “নীল কুঠি“ তেই “ঢাকা ব্রাক্ষ স্কুল“ এর কার্যক্রম শুরু হয় । বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর কূলে পুরনো ঢাকার বাংলাবাজারস্থ নর্থব্রুক হল রোডের পূর্ব পাশেই এ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান ।
যাহোক, এক সময় স্কুলটি আর্থিক সংকটের মুখোমুখি দাঁড়ালে ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে বালিয়াটির জমিদার বিশিষ্ট সমাজসবেক, দানবীর ও শিক্ষাবান্ধব ব্যক্তিত্ব শ্রীযুক্ত কিশোরী লাল রায় চৌধুরী প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে স্কূলটির নতুন নামকরণ করেন ‘জগন্নাথ স্কুল‘ । উল্লেখ্য, শ্রীযুক্ত জগন্নাথ রায় চৌধুরী ছিলেন কিশোরী লাল রায় চৌধুরীর পিতা. যার নামে আরও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পুরনো ঢাকার বর্তমানের ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়‘ ও প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মীয় সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য ‘জগন্নাথ হল‘ । ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে কলেজ খোলার অনুমতি পাবার পর জগন্নাথ স্কুল ও কলেজ একই কেন্দ্রীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতে থাকে । পরবর্তীতে ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার সিংহাসনে আরোহণ উপলক্ষে স্কুল ও কলেজ দ‘টি আলাদা সত্ত্বা লাভ করে । কলেজটির নামকরণ করা হয় ‘জগন্নাথ কলেজ‘ । আর স্কুলটির নামকরণ করা হয় ‘কিশোরী লাল জুবিলী স্কুল ও কলেজ বা সংক্ষেপে ‘ কে. এল. জুবিলী স্কুল‘। পরবর্তীতে সাবেক সফল প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রয়াত জনাব মোঃ কামরুজ্জামানের মহৎ উদ্যোগে ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের জন্য প্রাতঃ শাখা খোলা হয় । তাঁরই নেতৃত্বে ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে মাধ্যমিক শাখা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ণঙ্গা প্রাতঃ শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে কলেজ শাখা প্রতিষ্ঠার পর প্রতিষ্ঠানটি নবরূপ পায় ‘কে. এল. জুবিলী স্কুল ও কলেজ হিসেবে। অত্র এলাকাবাসীর সুখ–দুঃখের সাথী হয়ে স্বল্প টিউশন ফি‘র বিনিময়ে বর্তমানে নিম্নবিত্ত, নিম্ন–মধ্যবিত্ত ও কিছু মধ্যবিত্ত তথা সর্বশ্রেণীর অভিভাবকদের সন্তান –শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের মহান অঙ্গীকার নিয়ে অত্র প্রতিষ্ঠানটি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার মাধ্যমে আজও সফলতার সাথে অগ্রসরমান । এখানে মধ্য্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখা–সহ কারিগরী শাখা চালু রয়েছে । ফলে বহুমুখী শিক্ষা গ্রহণের জন্যে এটি একটি আদর্শ সূতিকাগার ।