আসসালামু আলাইকুম ।
কিশোরী লাল জুবিলী স্কুল ও কলেজ এর ওয়েব সাইটে সবাইকে সাদর আমন্ত্রণ । সৃষ্টির রূপ অবয়ব পরিবর্তন পৃথিবীর চিরন্তন রীতি। ১৮৬৬ সালে পর্তুগীজদের পরিত্যাক্ত নীলকুঠিতে Òব্রাক্ষ স্কুল” হিসেবে যে প্রতিষ্ঠানটি আত্মপ্রকাশ করেছিল, আজ ১৫৭ বছরের পথ পরিক্রমায় সেই প্রতিষ্ঠানটি কিশোরী লাল জুবিলী স্কুল ও কলেজ হিসেবে বাংলাদেশের প্রাচীনতম এবং শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জল । প্রথমেই আমি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা কিশোরী লাল রায় চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি, প্রতিষ্ঠানটিকে যিনি নবরূপে রূপায়িত করেছেন, স্বাধীনতা পদক ও একুশে পদকে ভূষিত অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানকে । বহু বন্ধুর পথ অতিক্রমের পর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার আমাকে গভার্নিং বডির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন । আমি পরিবর্তনে বিশ্বাসী । বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা আর Giving and Receiving এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই । গোটাবিশ্বে শিক্ষাব্যবস্থা এখন Learning বা সমন্বিত শিক্ষণের উপর নির্ভরশীল । ফলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং গভার্নিং বডির সমন্বিত সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের স্বর্ণদ্বারে পৌছে দেওয়া সম্ভব। আমার এ লক্ষ্য ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আপনারা আমার সহযাত্রী হবেন বলে আমি বিশ্বাস করি । আপনার, আমার-সবার প্রচেষ্টায় এ প্রতিষ্ঠানের হৃত সম্মান ফিরিয়ে আনা সম্ভব । আবার, এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিশ্বসভায় মাথা উচুঁ করে বলবে, I am proud to be a jubilian আবার, এ প্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি হবে – ড. মেঘনাথ সাহা, ড. দীনেশ চন্দ্র সেন, ড. নবগোপাল দাস, ব্রজেন দাস এর মতো বরেণ্য ও বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ।
নিয়ম-শৃঙ্খলা, শিক্ষার মানোন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠান এগিয়ে যাবে আপন গতিতে । প্রাতিষ্ঠানিক সব তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে পুরো প্রতিষ্ঠানকে ইতোমধ্যে ডিজিটাইজ্ড করা হয়েছে। আইসিটি ল্যাব স্থাপন ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া।অনলাইন ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে লেনদেনের ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।প্রযুক্তির এ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি প্রযুক্তি নির্ভরতার দিকে।আমাদের লক্ষ্য সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে আইসিটি জ্ঞান ও কম্পিউটার চালনায় দক্ষ করে তোলা যাতে অর্জিত শিক্ষা ভবিষ্যতে কাজে লাগানো যায়। আশা করি,আপনারা সবাই হবেন আমাদের সুহৃদ সাথী। গভার্নিং বডির সদস্য প্রিয় শংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, বলাই চন্দ্র দত্ত, মোঃ মামুন-আর-রশিদ , ছালমা বেগম, মোঃ মোশাররফ হোসেন, রাজু আহমেদ, পনির সাহা, ফজলে রাব্বি রহমান, খায়ের উদ্দিন আহমেদ, সানজিদা তানজিন, দাতা প্রতিনিধি রেজাউর রহমান সিনহা, শিক্ষানুরাগী সদস্য জাহিদ হাসান এবং সদস্য-সচিব অধ্যক্ষ ………………. কে সাথে নিয়ে আপনাদের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে যেতে চাই বহুদূর । হয়তো সেদিন দূরে নয়, যেদিন কিশোরী লাল জুবিলী স্কুল ও কলেজ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে ।
আমি বিশ্বাস করি, কবি গোলাম মোস্তফার অমর বাণী,
”বিশ্বসভায় আবার মোরা নতুন করে আসন লব
আবার মোরা এই জীবনে পুণ্যে-জ্ঞানে ধন্য হব ।”
সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
[elementor-template id=”152″
মানুষের জীবন ও সমাজের চাহিদার নিরিখে শিক্ষার লক্ষ ও উদ্দেশ্য নির্ধারিত হয়। নতুন নতুন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তা আবার পরিবর্তিত হয়। শিক্ষাই সুন্দরতম, উন্নতর জীবন ও সমাজ গঠনের প্রধান হাতিয়ার। এজন্য যুগের চাহিদা মেটাতে পারে এমন শিক্ষার প্রয়োজন। আনন্দময় শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি-নির্ভর, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বদ্ধ, মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন মানব সম্পদ গড়ে তুলতে আমরা বদ্ধপরিকর।
উনবিংশ শতাব্দীর ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাক্ষ আন্দোলনের জোয়ার যখন ঢাকা শহরকে আন্দোলিত করে, ঠিক থখনি বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ববর্গ সর্বশ্রী অনাথ বন্ধু মল্লিক, ব্রজসুন্দর মিত্র ও দীননাথ সেন প্রমুখ–এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টয় প্রতিষ্ঠিত হয় “ঢাকা ব্রাক্ষ স্কুল“ । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পুর্তুগিজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করার পর পর্তুগিজদেরই স্থাপিত ভবন “নীল কুঠি“ তেই “ঢাকা ব্রাক্ষ স্কুল“ এর কার্যক্রম শুরু হয় । বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর কূলে পুরনো ঢাকার বাংলাবাজারস্থ নর্থব্রুক হল রোডের পূর্ব পাশেই এ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান ।
যাহোক, এক সময় স্কুলটি আর্থিক সংকটের মুখোমুখি দাঁড়ালে ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে বালিয়াটির জমিদার বিশিষ্ট সমাজসবেক, দানবীর ও শিক্ষাবান্ধব ব্যক্তিত্ব শ্রীযুক্ত কিশোরী লাল রায় চৌধুরী প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে স্কূলটির নতুন নামকরণ করেন ‘জগন্নাথ স্কুল‘ । উল্লেখ্য, শ্রীযুক্ত জগন্নাথ রায় চৌধুরী ছিলেন কিশোরী লাল রায় চৌধুরীর পিতা. যার নামে আরও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পুরনো ঢাকার বর্তমানের ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়‘ ও প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মীয় সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য ‘জগন্নাথ হল‘ । ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে কলেজ খোলার অনুমতি পাবার পর জগন্নাথ স্কুল ও কলেজ একই কেন্দ্রীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতে থাকে । পরবর্তীতে ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার সিংহাসনে আরোহণ উপলক্ষে স্কুল ও কলেজ দ‘টি আলাদা সত্ত্বা লাভ করে । কলেজটির নামকরণ করা হয় ‘জগন্নাথ কলেজ‘ । আর স্কুলটির নামকরণ করা হয় ‘কিশোরী লাল জুবিলী স্কুল ও কলেজ বা সংক্ষেপে ‘ কে. এল. জুবিলী স্কুল‘। পরবর্তীতে সাবেক সফল প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রয়াত জনাব মোঃ কামরুজ্জামানের মহৎ উদ্যোগে ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের জন্য প্রাতঃ শাখা খোলা হয় । তাঁরই নেতৃত্বে ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে মাধ্যমিক শাখা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ণঙ্গা প্রাতঃ শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে কলেজ শাখা প্রতিষ্ঠার পর প্রতিষ্ঠানটি নবরূপ পায় ‘কে. এল. জুবিলী স্কুল ও কলেজ হিসেবে। অত্র এলাকাবাসীর সুখ–দুঃখের সাথী হয়ে স্বল্প টিউশন ফি‘র বিনিময়ে বর্তমানে নিম্নবিত্ত, নিম্ন–মধ্যবিত্ত ও কিছু মধ্যবিত্ত তথা সর্বশ্রেণীর অভিভাবকদের সন্তান –শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের মহান অঙ্গীকার নিয়ে অত্র প্রতিষ্ঠানটি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার মাধ্যমে আজও সফলতার সাথে অগ্রসরমান । এখানে মধ্য্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখা–সহ কারিগরী শাখা চালু রয়েছে । ফলে বহুমুখী শিক্ষা গ্রহণের জন্যে এটি একটি আদর্শ সূতিকাগার ।